আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা সহ এই সোনার তরী কবিতার মূলভাব ও শেয়ার করা হবে।
তোমরা যদি এই সোনার তরী কবিতা বুঝতে চাও এবং পরীক্ষায় ভালো মতো লিখতে চাও তাহলে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকো। যদি সোনার তরী কবিতার মূলভাব টি ভালোমতো বুঝে যাও তাহলে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব সহজ হবে।
সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা
নিচে আপনাদের জন্য এক এক করে সুন্দরভাবে সহজ ভাষায় সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা এবং আলোচনাগুলো তুলে ধরা হলো।
[এখানে কপিরাইটের সমস্যার কারণে কবিতার লাইনগুলো হুবহু তুলে দেওয়া হয়নি। পড়ার সময় কবিতাটি সামনে নিয়ে তারপর পড়বেন]
✓ প্রথম লাইনে বলা হয়েছে গগনে গর্জে মেঘ এটার মানে হচ্ছে আকাশে মেঘ ডাকতেছে এবং সাথে ঘন বৃষ্টিও হচ্ছে।
✓ পরের লাইনে কবি নদীর কূলে একা একা বসে আছে এবং তার ফসল হওয়ার কোন ভরসা নাই।
✓ প্রতিটা জমি থেকে ধানগুলো কাটা হয়েছে এবং রাশি রাশি মনে হচ্ছে অনেক ধান পেয়েছে। আর ভাড়া ভাড়া মানে হচ্ছে ধান রাখার পাত্রের মধ্যে ধানগুলো মজুদ করে রাখা হয়েছে।
✓ কিন্তু এখানে বর্ষাতে নদীর মধ্যে যেগুলো পানি থাকে সেগুলো খুরের মতো ধারালো এবং নদী ভরাট হয়ে আছে। এছাড়া এখানে স্রোত গুলোর কথাও বলা হয়েছে।
✓ খড় ভরসা বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে বর্ষা কালটা অনেক বেশি ধারালো ।
✓ দ্বিতীয় পেরার প্রথম লাইনটিতে বোঝানো হয়েছে কবির ধানগুলো কাটতে কাটতে বর্ষাকাল চলে এসেছে।
✓ এর পরের লাইনে কবি বলেছে তার একটিমাত্র ছোট ধানের জমি আছে এবং তিনি একাই সেই ধানের জমিতে কাজ করে বা তিনি একাই সেখানে রয়েছেন।
✓ কবির ছোট ধানের ক্ষেত কে এখানে একটি দ্বীপের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে চারদিকে শুধুমাত্র বর্ষার পানিগুলো থৈ থৈ করছে।
✓ চারদিকে পানি এবং কবি একা একা জমির পাড়ে বসে নিঃসঙ্গ অবস্থায় বিষয়গুলো দেখতেছে।
✓ তারপরের তিন লাইনে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি সকালে উঠে তার ছোট্ট জমিতে একা বসে অপর পাশের গ্রামটিকে মেঘাচ্ছন্ন আকারে দেখতেছেন। অর্থাৎ ওপর পাড়ের গ্রামটি একদম মেঘে ঢেকে গেছে।
✓ এরপরে সোনার তরী কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে ক্ষুরধারা পানি অর্থাৎ রাগান্বিত পানি গুলো গান গাইতেছে এবং তীরের কাছে বই আসতেছে । আর কবি এই পানি গুলোকে দেখে বলতে চেয়েছেন যে তিনি সেগুলোকে আগেই চিনেন বা আগেই এই পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করেছেন।
✓ পানিগুলো চলে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে কোন আগ্রহ নেই কারণ কবি একদম অসহায় তার করার মত কিছু নেই।
✓ পানিগুলো যে ঢেউ খেতে খেতে আসছে এই ঢেউগুলোও নিরুপায় আবার এগুলো কেউ কবি আগেই চেনে।
✓ পরের লাইনে থাকা বিদেশ শব্দটিকে কবি এখানে চিরায়ত শিল্পী লোকের একটা চিহ্ন হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন। আর মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণের একটা ছোট্ট চেষ্টা করেছেন।
✓ এর পরের ছন্দে কবি সেগুলোকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন যেখানে খুশি সেখানে যাও ।
✓ সোনার ধান বলতে কবি এখানে কৃষকদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বা ফসল বোঝাতে চেয়েছেন।
✓ পরের চরণগুলোতে কবি আবেগের সাথে কিছুটা রাগ ভরা মন নিয়ে বলেছেন যে তার জমিতে যত ফসল ছিল সবগুলোই তিনি বিধাতার হাতে তুলে দিয়েছেন। অর্থাৎ বর্ষাকালে যে ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলোর কথাই তিনি এখানে আবেগের করুণে তুলে ধরেছেন।
✓ শেষের চরণে কবি একা রহিনু পড়ে বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, কৃষকের সোনার ফসল বা শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধান সবগুলাই সোনার তরী ভেসে নিয়ে গেছে । এখানে সর্বস্ব হারিয়ে কবি একা রয়েছেন সেটারই কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এগুলোই ছিল মূলত সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা। এখানে আমরা কবিতার লেখাগুলো সরাসরি উল্লেখ করি নাই। তবে পোস্টটি যখন পড়বেন তখন অবশ্যই বই সামনে নিয়ে এই ব্যাখ্যা গুলো পরতে থাকবেন।
সোনার তরী কবিতার মূলভাব
কবিতা পড়ে বোঝা একটু কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত সোনার তরী কবিতাটি বেশ কঠিন ভাষায় লেখা হয়েছে।
তো ওপরে আমরা সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা আপনাদেরকে করে দিয়েছি। কিন্তু এখানে কবিতা থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অবশ্যই কবিতার মূলভাব ভালো মতো বুঝে নিতে হয়।
এই কারণে এখন আমরা আপনাদের সাথে সোনার তরী কবিতার মূলভাবটি শেয়ার করব যাতে করে এখান থেকে কোন সৃজনশীল প্রশ্ন আসলে সেটার উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সোনার তরী কবিতাটি রচনা করেন মানুষের চিন্তা ভাবনার এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছেন।
মূলভাব: কবি সোনার তরী কবিতার মাধ্যমে কৃষকের একটা বড় দুঃখের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে তিনি কৃষকের সোনার ফসল অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ধান এর কথা বেশি বেশি উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কৃষকের ধানগুলো কিভাবে বর্ষাকালে এসে ধ্বংস হয়ে যায় সেটার ও একটা চিত্র ফুটে তোলার চেষ্টা করেছেন। যখন ধান কাটা শেষ হয় বা ধান কাটার সময় হয় তখন কিভাবে আকাশে মেঘ গর্জন করে এবং বৃষ্টি হয়ে চারদিকে থৈ থৈ পানি দিয়ে ভরে যায় সেটা বলা হয়েছে।
কৃষকের ছোট্ট একটি জমির চারপাশে যখন অথৈ পানি আর পানি এবং বড় বড় ঢেউয়ের উৎপন্ন হয় তখন কৃষক যে কত বড় অসহায় হয়ে পড়ে সেটার একটা উদাহরণ তিনি এখানে দেখিয়েছেন।
যখন বর্ষাকাল এ রাগান্বিত বৃষ্টি এসে কৃষকের সমস্ত সম্পদ ডুবিয়ে নিয়ে যায় তখন পারে বসে বসে দেখা ছাড়া আর কোন কিছু করার থাকে না। কবি নিজেকে একজন ক্ষুদ্র কৃষক এবং অসহায় কৃষক দেখিয়ে বিষয়টি কবিতার মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কৃষক যখন নিজের খেতে বসে অপর পাশে গ্রামের দিকে চেয়ে দেখে যে সেখানে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে অন্ধকার হয়ে গেছে এবং মেঘ গর্জন করছে তখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়।
আর এখানে সোনার তরী শব্দটিকে কবি মহাকালের উদাহরণ হিসেবে লিখেছেন। সোনার তরী বলেছেন এর কারণ হচ্ছে সোনার তরির মতো করে মহাকাল বা একটি দুর্যোগে সে যেভাবে কৃষকের সমস্ত স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়ে যায় সেটাকেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
কবিতার শেষের দিকে কবি কৃষকের আরো করুণা সুরে এই সমস্ত সম্পদকে মহাকালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। কবিতার শেষার অংশ পড়লে বোঝা যায় কবি আবেগের কারণে নিজের সমস্ত সম্পদ সোনার তরির হাতে তুলে দিয়েছেন এবং নিজে একা একা দুঃখ ভরা মনে বসে আছে।
সোনার তরী কবিতার কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
নিচে সোনার তরী কবিতা থেকে আসা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন এবং সাথে এগুলোর উত্তর তুলে ধরা হল। আশা করি এই প্রশ্ন এবং উত্তরগুলো পড়লে পরীক্ষায় কমন পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন: সোনার তরী কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত
উত্তর: যদিও কবিতাটির শেষের শূন্য দেখে মনে হয় যে এটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রচিত কিন্তু সোনার তরী কবিতাটি মূলত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: সোনার তরী কিসের প্রতীক?
উত্তর: সোনার তরী হচ্ছে এখানে মহাকালের প্রতিক।
প্রশ্ন: সোনার তরী কবিতায় সোনার ধান কিসের প্রতীক?
উত্তর: সোনার তরী কবিতার মধ্যে এখানে সোনার ধান বলতে কৃষকের অমূল্য সম্পদ বা কৃষকের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলতে বোঝানো হয়েছে ।
প্রশ্ন: সোনার তরী কবিতায় মাঝি কিসের প্রতীক?
উত্তর: সোনার তরী কবিতায় মাঝি কেও এখানে মূলত মহাকালের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বর্ষাকালে যে একটি মহাকাল চলে আসে এবং কৃষকের ফসল নষ্ট হয় সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন: সোনার তরী কোন ধরনের কবিতা?
উত্তর: সোনার তরী কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ এর একটি নাম কবিতা। আর এই কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
প্রশ্ন: সোনার তরী কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: সোনার তরী কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন: সোনার তরী কবিতায় বাঁকা জল কিসের প্রতীক?
উত্তর: কবিতাটিতে বাঁকা জল বলতে কবি এখানে কালো স্রোতের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। অর্থাৎ সোনার তরী কবিতায় বাঁকা জল কালো স্রোতের প্রতিক।
পরিশেষেঃ আজকের এই ছোট পোষ্টের মাধ্যমে পাঠকদেরকে আমরা সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা এবং সোনার তরী কবিতার মূলভাব টি ভালোমতো বুঝিয়ে দিয়েছে।
আশা করি পোস্টটি পড়লে সোনার তরী কবিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে যাবেন। এছাড়াও যদি সোনার তরী কবিতার মধ্যে থাকা কোন লাইন বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।