মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি, পড়ার নিয়ম ও সময়

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি | মাগরিবের নামাজের সময় ও নিয়ম

আসসালামুয়ালাইকুম আজকের পোস্টে মাগরিবের নামাজ নিয়ে সবকিছু আলচনা করা হবে। এখানে আজকে মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি সহ মাগরিবের নামাজের নিয়ম, নিয়ত সহ যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়বস্তু আলোচনা করা হবে।

মাগরিবের নামাজের সময় নিয়ে প্রায় প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা থাকে এ কারণে এখানে মাগরিবের নামাজের সময় নিয়েও আলোচনা করা হবে।

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরয। এর মধ্যে মাগরিবের নামাজ ও একটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ যেটি ৪ নম্বর নামাজ হিসেবে পরিচিত। তো চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আজকের পোস্টে মাগরিবের নামাজের সময় সহ যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি

প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যেই এই প্রশ্নটা সবথেকে বেশি থাকে যে মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি। নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই সেই নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে যথেষ্ট পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে ।

পড়ুনঃ আসরের নামাজ কয় রাকাত, সময়, নিয়ম ও নিয়ত

যদি নামাজের রাকাত সংখ্যা ঠিকভাবে না জানেন তাহলে সেই নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারবেন না।

প্রত্যেক নামাজে একটি ফরজ নামাজ থাকে। প্রধানত সেই ফরজ নামাজের রাকাত কে সেই ওয়াক্ত নামাজের রাকাত হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঠিক একইভাবে মাগরিবের নামাজ রয়েছে তিন রাকাত ফরজ নামাজ। সুতরাং আমরা বলতে পারি মাগরিবের নামাজ প্রধানত ৩ রাকাত।

কিন্তু প্রতিটা নামাজের শেষে কিংবা শুরুতে কিছু সুন্নত বা নফল নামাজ থাকে। ঠিক একইভাবে মাগরিবের নামাজের শেষেও দুই রাকাত নফল এবং দুই রাকাত সুন্নত রয়েছে।

আমরা যদি সেই নফল এবং সুন্নতকে একত্র করে ধরি তাহলে মাগরিবের নামাজ হবে মোট সাত রাকাত । সুতরাং আমরা বলতে পারি মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। এখানে তিন রাকাত ফরজ তারপর দুই রাকাত সুন্নত এবং দুই রাকাত নফল নামাজ রয়েছে।

মাগরিবের নামাজের নিয়ম

নামাজ পড়া যেহেতু প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। একইভাবে এই নামাজ পড়ার নিয়ম ও জানা প্রত্যেকের জন্য জরুরী । তো নিচে এখন আমরা আপনাদেরকে মাগরিবের নামাজের নিয়ম সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলাম।

✓ প্রথমে ৩ রাকাত ফরজ

মাগরিবের নামাজ ৭ রাকাত আদায় করতে হলে প্রথমে আপনাকে তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

প্রত্যেক পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে ফরজ নামাজ আদায় করা উত্তম । তবে মহিলারা বাড়িতে বসেই সকল আদায় করবে। জামাতের সাথে এই নামাজ আদায় করতে হলে সেখানে ইমাম কে অনুসরণ করতে হবে।

তবে নিচে সুন্দর ভাবে সহজ ভাষায় তিন রাকাত মাগরিবের নামাজের নিয়ম বলা হলো:

প্রথমে নিয়ত করার পর আল্লাহু একবার বলে হাত বাঁধতে হবে। এরপর চান পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলাতে হবে ।

এরপর রুকু করতে হবে এবং সেজদা করতে হবে । এভাবে দুই রাকাত পড়ার পর একটি বৈঠক দিতে হবে।

বৈঠক এর পর উঠে একইভাবে আর এক রাকাত আদায় করলে মাগরিবের ফরজ ৩ রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।

✓ ২ রাকাত সুন্নত

ফরজ নামাজ বাদে বাকিগুলো একা একা আদায় করতে হয়। দুই রাকাত সুন্নত আদায় করতে হলে প্রথমে আপনাকে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে তারপর রুকু সাজদা করতে হবে।

এভাবে একটি রুকু এবং দুইটি সাজদা করে মোট দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে তাহলে আপনার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

✓ ২ রাকাত নফল

নফল নামাজ আদায় করার অন্য কোন নিয়ম নেই। যেভাবে আপনি দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করেছেন একইভাবে মাগরিবের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারবে।

মাগরিবের নামাজের নিয়ত

যদিও নামাজের আগে মুখে নিয়ত পাঠ করতে হবে এমন কোন হাদিস রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পক্ষ থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় না।

আরোও পড়ুনঃ যোহরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি , সময় ও পড়ার নিয়ম

তবে আপনাদের জানা সুবিধার্থে এখন আপনাদের সাথে এই মাগরিবের নামাজ এর নিয়তগুলো সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হবে।

মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি | মাগরিবের নামাজের সময় ও নিয়ম

মাগরিবের নামাজের সময়

মাগরিবের নামাজের সময় নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকে। এর প্রধান কারণ হলো এই নামাজের সময় অনেক সল্প। সময় স্বল্পতার কারণে নামাজের সময় নিয়ে মানুষ সঠিকভাবে বুঝতে পারে না।

মনে রাখবেন মাগরিবের নামাজের সময় সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে কিন্তু একবারে অন্ধকার হয় না। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাত হতে মাঝখানে বেশ কিছু সময় থাকে।

আর এই মাঝখানের সময়টুকুই মূলত মাগরিবের নামাজের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর যতক্ষণ পর্যন্ত আলো থাকবে এবং পশ্চিম দিকে লাল অভা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের নামাজ পড়া যাবে।

যেহেতু প্রতিদিন সূর্য এক সময় ডুবে না এবং একসময় ওঠে না এই কারণে প্রতিদিন এই নামাজের সময় ও পরিবর্তন হতে পারে। যখনই সূর্য একদম ডুবে থাকে তখন থেকেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাবে।

মনে রাখবেন সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কিন্তু যে কোন নামাজ আদায় করা হারাম। ঠিক একইভাবে সূর্য যখন উঠতে থাকে তখনও নামাজ পড়া হারাম একইভাবে সূর্য যখন মাথার উপরে থাকবে তখন নামাজ পড়া হারাম।

আজকের মাগরিবের নামাজের সময়

আপনি যদি আজকের মাগরিবের নামাজের সময় বুঝতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই দিনের সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় টি সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে।

এজন্য আপনি চাইলে গুগলে আপনার লোকেশন এর নাম লিখে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ের ব্যাপারে সার্চ দিতে পারেন ।

সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যেটি হবে তার এক মিনিট পর থেকে আপনার মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু করতে পারবেন । এভাবে মোটামুটি ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো থাকে মাগরিবের নামাজ এর সময়।

কিন্তু যেহেতু অন্ধকার হয়ে গেলে মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হয়ে যায় এই কারণে এই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়ে নেওয়া উত্তম।

মাগরিবের নামাজের শেষ সময়

মাগরিবের নামাজের শেষ সময় সম্পর্কেও আমাদের মধ্যে অনেক সমস্যা থাকে। অর্থাৎ আমরা এই মাগরিব নামাজের শেষ সময় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত নাই বা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিনা।

মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত তখনই শেষ হয়ে যায় যখন চারপাশে একদম অন্ধকার হয়ে যায়। আপনি শুধুমাত্র ঘড়ির সময় দেখে এই নামাজের শেষ সময় নির্ধারণ করতে পারবেন না।

কারণ প্রতিদিন সূর্য ডোবার সময় পরিবর্তন হতে থাকে এর সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের শেষ সময়ও পরিবর্তন হতে থাকে। যখন দেখবেন সূর্যাস্তের পরে পশ্চিম দিকে আর কোন আলো দেখা যাচ্ছে না বা লাল আভা চলে গেছে তখনই মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়।

মাগরিবের আজানের সময়

সাধারণত মাগরিবের নামাজের আজান দেওয়ার সাথে সাথে এই নামাজ আমরা পড়ে নেই। কারণ মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে আযান দেওয়া হয় এবং এই নামাজের সময় খুব অল্প পরিমাণে থাকে।

সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের আজান দেওয়া হয়। আর এই আযান দেওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করা শুরু করে দেওয়া হয় ।

এখানে বুঝা গেল যে মাগরিবের নামাজের সময় এবং মাগরিবের আজানের সময় এর মধ্যে কোন বেশি পার্থক্য নেই। অর্থাৎ মাগরিবের নামাজের সময় যখন শুরু হয় তখনই এর আযানটি দেওয়া হয়।

মাগরিবের পর সূরা ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর অনেক হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করলে অনেক ধরনের ফজিলত পাওয়া যায়।

এই সূরা ওয়াকিয়ার ফজিলত অনেক বেশি রয়েছে। অর্থাৎ যদি কেউ নিয়মিত সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তার সংসার থেকে অভাব অনটন দূর করে দেন।

আর সূরা ওকিয়া রাত্রে বেশি বেশি তেলাওয়াত করার কথা হাদিসে বর্ণনা পাওয়া যায়। এখানে বলা আছে যে রাত্রে সূরা ওয়াকিয়া বেশি তেলাওয়াত করলে আল্লাহ অভাব দূর করে দেন ।

যেহেতু মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হলে রাত হয়ে যায় এই কারণে আমরা এটিকে মাগরিবের পর বলে থাকি। কিন্তু বন্ধুরা নির্দিষ্ট ভাবে মাগরিবের পরেই সূরা অয়াকিয়া পাঠ করলে ফজিলত পাওয়া যাবে এমনটি নয়।

আপনি রাতে সব সময় এই সূরাকে পাঠ করলেন ফজিলত পাবেন ইনশাল্লাহ। চাইলে এশার নামাজ আদায় করার পরেও আপনারা নিয়মিত সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করতে পারেন।

পরিশেষে

আজকের পোস্টে মূলত আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি। এছাড়াও এই পোস্টে মাগরিবের নামাজের শেষ সময় এবং মাগরিবের নামাজের সময় সম্পর্কে সঠিকভাবে সহজ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।

এই বর্ণনা গুলোর মধ্যে যদি কেউ কিছু বুঝে না থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন আল্লাহ তাআলার কাছে বিজোড় সংখ্যা অত্যন্ত প্রিয় একটি জিনিস।

এই বিজোড় সংখ্যক ইবাদত গুলো আল্লাহতালা বেশি পছন্দ করে থাকেন। আর যেহেতু মাগরিবের নামাজের রাকাত সংখ্যা বিজোড়, এই কারণে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এই নামাজ কে বেশি পছন্দ করবেন।

এই কারণে কখনোই মাগরিবের নামাজ ত্যাগ যাবেন। কোনো নামাজই ত্যাগ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা সকলকে পাঁচ ওযক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *