আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। তোমরা যারা যারা লালসালু উপন্যাসের মূলভাব খুজতেছ তাদের জন্য আজকে এই পোস্ট। অবশ্যই জানো পরীক্ষার মধ্যে কিন্তু উপন্যাস থেকে একাধিক সৃজনশীল এবং নৈব্যক্তিক আসতে দেখা যায়। যদিও মূলভাব পড়ে সবগুলো নৈব্যক্তিক উত্তর করা সম্ভব নয় কিন্তু যদি তোমরা এই লালসাল উপন্যাসের মূলভাব ভালোভাবে বুঝে পড়ো তাহলে এখান থেকে আসা প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্ন এর উত্তর দিতে পারবে।
উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা বই এ যে নাটক ও উপন্যাস রয়েছে এর মধ্যে লালসালু উপন্যাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপন্যাস। প্রায় প্রতিটা পরীক্ষাতে এখান থেকে সৃজনশীল এবং নৈব্যত্তিক প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। পুরো উপন্যাসটি যেহেতু বেশ বড় এই কারণে যারা উপন্যাসটি ভালোভাবে পড়নি তারা এখান থেকে উপন্যাসের মূলভাবটি ভালোভাবে পড়ে গেলে আশা করি সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে।
লালসালু উপন্যাসের মূলভাব
এই উপন্যাসটি লিখেছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি এই উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকদের কে বর্তমান সমাজে চলা বেশ কিছু প্রথা এবং ভন্ডামীর ব্যাপারে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসটি পড়লে আমরা দেখতে পাব সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এখানে বর্তমানে সমাজের মানুষ ধর্মকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে এই দিকটি খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
লেখক এই উপন্যাসের মধ্যে বেশ কিছু চরিত্র কে নিয়ে এসে উপন্যাসের মূল উপজীব টা আমাদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন। চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রধান চরিত্র হচ্ছে মজিদ। এই মজিদ নামক চরিত্রের মাধ্যমে তিনি ধর্ম ব্যবসা কিভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে সেটা বুঝিয়েছেন।
মজিদ নামের এক ভন্ড ব্যক্তি ছিল যে প্রথমে অন্য একটি গ্রামে বসবাস করত কিন্তু সে সেখানে ভালোভাবে চলতে পারত না অর্থাৎ গরিব ছিল। কিন্তু হঠাৎ সে মহাব্বত নগত নামে একটি গ্রামে এসে বাসা বাধে। এখানকার মানুষদেরকে সে বেশকিছু ভুল বোঝায়। যেমন সে এখানে বলে যে এই গ্রামে একজন বড় বুজুর্গ ব্যক্তির কবর আছে যেটা সে স্বপ্নে দেখেছে।
এই কথা বলে সে গ্রামের মধ্যে একটি মাজার আবিষ্কার করে যেখান থেকেই মূলত সে তার ধর্মব্যবসা শুরু করে। যেহেতু আগের মানুষ বেশি পড়ালেখা জানতো না এবং চালাক ছিল না এই কারণে এই মজিদ নামক মানুষের যাবতীয় কথাগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করে। সে মানুষকে বলতে শুরু করে যে মাজারে কোন কিছু দান করলে তাদের মনের আশা পূরণ হবে। এই আশায় মানুষজন সেখানে বিভিন্ন টাকা-পয়সায় এমনকি মুরগি খাসিসহ অনেক কিছু দান করতে শুরু করে যেটা এই মজিদ নামক ব্যক্তি নিজে আত্মসাৎ করে।
এরকম করে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে যায় কিন্তু তার লোভ দিন দিন আরো বাড়তে থাকে। এরপর সে ক্ষমতার লোভ করতে শুরু করে এবং এই গ্রামের বড় বড় যেসব মাতাব্বর আছে বা বড় ব্যক্তিত্ব মানুষগুলো আছে তাদের পিছনে লেগে পড়ে। এই মহাব্বত নগর গ্রামে একজন খালেক বেপারী নামক একটি ছিল সে মূলত এই গ্রামের মাতব্বর ছিল।
এই খালেক ব্যাপারির পিছনে পড়ে এবং এই বেপারীকে সে নিজের বসে নিয়ে আসতে শুরু করে। এমনকি মজিদ মিনার এই সব কথা শুনে খালেক বেপারী ও তার ভক্ত হতে শুরু করে। যদিও এই খালেক ব্যাপারীর দুইজন স্ত্রী রয়েছে এবং সে অনেক ধর্মপ্রাণ ও শান্তি প্রিয় মানুষ। মজিদ মিয়া এই খালেক বেপারীকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তার ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেইয়ে নেয়।
ক্ষমতার লোভ পাওয়ার পর আস্তে আস্তে মজিদ এর নারীর প্রতিও লোভ বেড়ে যায়। যার ফলে মজিদ ভণ্ড এই গ্রামের মেয়ে রহিমা কে প্রথম স্ত্রী হিসেবে বিবাহ করে নেয়। এই রহিমা ছিল তার স্বামী মজিদের একান্ত অনুগত এবং স্বামী যেসব কাজ গ্রামে করে এগুলোতে সেই গর্ববোধ করত। তবে এই রহিমা ছিল একজন ভীতু মানুষ এবং লম্বা চওড়া শারীরিক শক্তি সম্পন্ন। যদিও রহিমা আল্লাহকে অনেক ভয় পেত এবং মাজারকেও শ্রদ্ধা করতে বা ভয় পেত।
মজিদ এরপর আরো একটি বিবাহ করে নেয় যার নাম হচ্ছে জমিলা। এই জমিলা ছিল আবার অনেক কম বয়সী একটি মেয়ে নিতান্তই কিশোরী আর ছিল গরিব ঘরের একজন মেয়ে। তবে জমিলা ছিল রহিমার একদম বিপরীত চরিত্রের প্রকৃতি। সে তার স্বামী মসজিদের এইসব কর্মকাণ্ড বিশ্বাস করত না। তবে রহিমা যদি তাকে সামান্য শাসন করতো এতেও তার চোখে জল চলে আসতো। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে মসজিদকে প্রথম দিকে সে তার ভাবি শ্বশুর মনে করেছিল। এর কারণ হলো জমিলা ছিল খুব কম বয়সী এবং মজিদ ছিল তার থেকে অনেক বেশি বয়সের একজন পুরুষ ।
মজিদ যেসব কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের ওপর মানুষ এর থেকে টাকা আত্মসাৎ করে নিত এগুলো এই জমিলা পছন্দ করত না এবং এগুলোর সে বিরোধিতা করত। মজিদের এই দ্বিতীয় স্ত্রী একসময় মজিদের মুখে থুতু মেরেছিল। এই জমিলা এমন মেয়ে ছিল যে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তো। এমনকি সে নামাজ পড়ার সময় নামাজরত অবস্থায় জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। মজিদ সবসময় গ্রামের মানুষদের উপর আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করতো যাতে গ্রামের প্রতিটা মানুষ তার কথা শুনে এবং সে নিজের স্বার্থগুলো হাসিল করতে পারে।
হঠাৎ করে আবার একজন পীরের আবির্ভাব হয় যে ছিল আউয়ালপুরের পীর। এই পীরের কাছে আমেনা তার স্বামীকে পানি পড়া আনতে বলছিল। আমেনার স্বামী ছিল হচ্ছে খালেক বেপারী অর্থাৎ খালেক ব্যাপারের প্রথম স্ত্রী হল এই আমেনা। কিন্তু এই বিষয়টি মজিদ দেখে নায় এবং সে খালেক ব্যাপারি কে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তার বউয়ের দোষ বের করে। শেষ পর্যন্ত খালেক ব্যাপারী তার প্রথম স্ত্রী আমেনাকে তালাক দিয়েছিল।
এখানে মজিদ ভেবেছিল যে যদি অন্য কোন পীর আসে তাহলে হয়তো তার এই এই ধরনের ধর্ম ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সে তার গ্রামে এই কুপ্রথা এবং ধর্ম ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছুই করেছিল এই গ্রামে। আবার আক্কাস আলী নামক একজন ব্যক্তি শহর থেকে পড়ালেখা করে গ্রামে এসেছিল এই মহব্বত নগরে। সে চেয়েছিল এরি গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে যাতে গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারে।
কিন্তু মজিদ ভেবেছিল যে গ্রামের মানুষ যদি শিক্ষিত হয়ে যায় তাহলে তার এই ধর্ম ব্যবসায়ী এবং মানুষের উপরে আধিপত্য টিকে থাকবেনা। এই কারণে সে গ্রামের মানুষজনকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে আক্কাস আলীকে গ্রাম ছাড়া করে। অর্থাৎ আক্কাস আলী যেন গ্রামে কোন ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে।
এই লালসালু উপন্যাসে আরো একটি চরিত্র দেখা যায় যার নাম হচ্ছে তাহের কাদেরের বাপ। যদিও লেখক উপন্যাসে এই ব্যক্তিটির নাম কোথাও উল্লেখ করে নাই কিন্তু এই উপন্যাসে তার ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারন এই তাহের কাদেরের বাপছিল একজন মজিদের বিরুদ্ধে একজন লোক যে মজিদের এই সকল ধর্মব্যবসা এবং আধ্যাত্মিক শক্তি গুলোতে অবিশ্বাসী ছিল । তবে সে তার বউয়ের সাথে সবসময় ঝগড়া করতো এবং বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতো। এমনকি তার বউও তাকে বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো অর্থাৎ তাদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া লেগে থাকবে।
তাহের কাদেরের বাপের ছিল মোট ৪ টি সন্তান, যার মধ্যে তিনটি ছিল ছেলে তাহের কাদের এবং রতন, আর একটি ছিল মেয়ে। এখানে উপন্যাসের মধ্যে মেয়েটিকে হাসুনির মা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই হাসুনির মা ছিল তাহের কাদেরের একজন বোন। তবে হাসুনির মা এই উপন্যাসের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র এবং অসহায় একজন ব্যক্তি আর সে ছিল বিধবা নারী। হাসুনির মায়ের স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই সে তার বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করে। সে মূলত মানুষের বাড়িতে গিয়ে ধান বানার কাজ করতো এবং সে দ্বিতীয় বিয়েতে আর বিশ্বাসী ছিল না অর্থাৎ সে আর নিকা করতে চায় না।
এভাবেই মূলত মজিদ এই গ্রামের প্রতিটা মানুষের ওপর এ ধর্মের কথা বলে অনেক টাকা এবং নিজের স্বার্থ হাসিল করেছিল। এখানে এই উপন্যাসে লাল কাপড় কে একটি চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে কারণ মজিদ যে মাজার আবির্ভাব করেছিল সেখানে লাল কাপড় বাঁধা থাকতো। যাতে মানুষ তার এই মাজারকে বিশ্বাস করে এবং সেখানে বেশি বেশি অর্থ প্রদান করে এ কারণেই মূলত সে সেখানে লাল কাপড় বেঁধে রাখত। মজিদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলতো তাকেই সে গ্রাম ছাড়া করত বা বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করার ব্যবস্থা করত।
সে সহজেই এই কাজ করতে পারতো কারণ গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারী ছিল তার পক্ষে এবং মজিদ মিঞার সমস্ত কথা সে মেনে চলত। লালসালু উপন্যাসের মাধ্যমে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পাঠকদের কে আগের ধর্মব্যবসা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। মানুষ কিভাবে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করা এবং মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তার করে রাখতে পারে তারই নমুনা দেখিয়েছেন তিনি এই লালসালু উপন্যাসের মধ্যে । ধর্মের বিভিন্ন কুসংস্কার এবং মানুষকে বিভিন্ন বিষয় থেকে সচেতন করাই ছিল সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মূল উদ্দেশ্য।
পরিশেষেঃ লালসালু উপন্যাসের মূলভাব
পোষ্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কে আমরা লালসালু উপন্যাসের মূলভাবটি খুব সুন্দরভাবে এ টু জেড বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি আমাদের দেওয়া এই মূলভাব কেউ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়তে পার তাহলে লালসালু উপন্যাস থেকে আসা কোন সৃজনশীল প্রশ্ন এর মধ্যে সে আর আটকাবে না। অর্থাৎ সে প্রতিটা সৃজনশীল প্রশ্নের খুব সুন্দরভাবে উত্তর দিতে পারবে।
আমরা যেহেতু এখানে বিভিন্ন চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছি এবং চরিত্র সম্পর্কে কিছু কথা বলেছি এই কারণে পোস্টটি পড়লে এখান থেকে অনেক নৈবিত্তিক উত্তর করাও সম্ভব হবে। আশা করছি লালসালু উপন্যাসের মূলভাব নিয়ে আর কারো কোন সমস্যা হবে না এরপরও যদি কোন সমস্যা হয় বা আরো কিছু জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে কমেন্টে আমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন।