আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা এবং মূলভাব (সহজ ভাষায়)

আঠারো বছর বয়স কবিতাটি লিখেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। কবিতায় তিনি আঠারো বছর বয়সকে একদম সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই বয়সে আমরা কি করি? কি করতে চাই কিংবা কি করা উচিত সবকিছুই তিনি এখানে বলেছেন।

তো এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এই আঠারো বছর বয়স কবিতাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে আজকের পোস্টে আপনাদের সাথে আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা এবং আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাবসহ এই আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা সহ আরো বেশ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করব।

আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা

এইচএসসি বাংলা বইয়ে যে সমস্ত কবিতা রয়েছে সেগুলো বেশ কঠিন ভাষায় লিখিত। তো এই কঠিন ভাষায় লেখা কবিতা গুলোর ব্যাখ্যা যদি আমরা না জানি তাহলে কিন্তু পরীক্ষায় উত্তর দিতে পারবো না।

নিচে এখন আমরা এই সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা এক এক করে বিস্তারিত জেনে নেব:

ব্যাখ্যাঃ প্রথম প্রথম লাইনের দুঃসহ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে আঠারো বছর বয়স এমন একটি বয়স যেখানে মানুষ কৈশোর জীবনকাল থেকে পূর্ণবয়স্কদের জীবনে পদার্পণ করে।

আর এই জীবনে পদার্পণ কালে তারা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা বাদ দিয়ে নিজে নিজে নির্ভরশীল হতে চায়। এটা একটা পুনঃ জন্ম ও বলা যেতে পারে এই কারণে কবি এখানে কি দুঃসহ কথাটি বলেছেন।

পরের লাইনে তিনি নিজের উপর আত্মনির্ভরতা বাড়ানোর কথাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার বয়স এই আঠারো বছর।

আঠারো বছর বয়সেই এমন কিছু দেখা যায় যেটা অন্য বয়সে দেখা যায় না। এখানে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে এই বয়সে অনেক নতুন কিছু করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। অর্থাৎ অনেক দুঃসাহস তাদের মাঝে চলে আসে ।

এই বয়সে মানুষ যেটাই করে সেটা নির্ভয় করতে চায়। অর্থাৎ তারা এই বয়সে হাজার রকমের বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে তার কাজ সম্পাদন করে থাকে।

এটি এমন একটি বয়স যেটা মাথানত করার মত নয়। অর্থাৎ নিজের আত্মসম্মান উঁচু পর্যায়ে রেখে প্রতিটা কাজ করে যেতে হয়। যেকোনো বাধা বিপত্তি আসলে সেটা ভেঙ্গে নিজের স্বপ্নকে পূরণ করা হয় এই বয়সে।

এই আঠারো বছর বয়স নিজের জীবন দিয়ে দেশ এবং জাতিকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিবার । এই কারণে কবি এখানে রক্তদানের পূর্ণ কথাটি উল্লেখ করেছেন।

নিচের লাইনে কবি এখানে বাষ্পের বেগের বলতে বুঝিয়েছেন যে এই বয়স কখনো স্থির নয় সব সময় স্টিমারের মতো গতি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

আঠারো বছর বয়সে কোন প্রাণ দেওয়া কিংবা নেওয়ার কোন ভয় থাকে না তাদের মনে। অর্থাৎ তারা দেশ এবং জাতিকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে। এই কারণে তারা নিজেরা আত্মাকে সঁপে দিতেও কোনো দ্বিধা বোধ করে না।

পরের স্তবকের আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা হবে: এই বয়সে অনেক ধরনের কুমন্ত্রণা আসতে পারে। যেমন অনেক খারাপ চিন্তা কিংবা অনেক খারাপ বন্ধুবান্ধব ও আসতে পারে।

আঠারো বছর বয়সী অনেক ভয়ঙ্কর এবং এই বয়সে অনেক যুবক বিভিন্ন যন্ত্রণা ও সহ্য করে। বয়সটি অনেক বেশি কঠিন এবং অনেক বেশি প্রখর।

পরের লাইনে দুর্বার বলতে বোঝানো হয়েছে এই আঠারো বছর বয়সটি অনেক কঠিন। অর্থাৎ এই বয়সটি পাড়ি দেওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। এই বয়সে পথে প্রান্তে অনেক ধরনের বিপদ আসতে পারে। আর এই দুর্যোগে নিজের কঠোর পরিশ্রম টিকে রাখাও অনেক কঠিন হয়ে যায়।

তাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে অনেক ক্ষতি হয়ে যায় বিভিন্ন মানুষ এর। এই বয়সে অনেক বাধা বিপত্তি আঘাত কিংবা অনেক ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

এখানে কবি লক্ষ্য দীর্ঘশ্বাসে বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আঠারো বছর বয়সে যদি কেউ সচেতন এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন চালনা করতে না পারে তাহলে তার মধ্যে হাজার হাজার ব্যাথা এবং বেদনা দায়ক বিষয় চলে আসতে পারে। যেহেতু এটি একটি আবেগের বয়স তাই এই বয়সে কোন কিছু হলে অবশ্যই সঠিক পথে এবং সঠিক লক্ষ্যে জীবন পরিচালনার প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে হবে।

যদিও এই বয়সে হাজার হাজার রকমের বাধা আসে কিন্তু তারপরেও কবি বয়সটিতে হাজার হাজার জয়ধ্বনিও শুনেছেন। যদিও বয়সটি অনেক দুর্যোগ এবং অনেক কঠিন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে চলে আসে কিন্তু এরপরেও অনেক মানুষ এগুলো কেটে তাদের সফলতা অর্জন করতে পারে।

এখানে এই বয়স অগ্রণী বলতে বুঝিয়েছেন যে , অনেক কিছু হওয়ার পরেও আঠার বছর বয়সে মানুষ নিজের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে এবং অনেক কিছুর নায়ক বনে যায়।

এতকিছু হওয়ার পরেও এই বয়সে মানুষ নতুন কিছু করে থাকে এবং তাদের লক্ষ্যে অটল থাকে। কবির চোখে এই বয়সটি কোন ভীত কিংবা নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার বয়স নয়।

বয়সটি কোন কাপুরুষ এর নয় এই বয়সে নিজের জীবনের লক্ষ্য কিংবা দেশের জন্য কোন কিছু করা থেকে কখনো থেমে যায় না। যার কারণে কবি এই বয়সে কোন ধরনের সংশয় কিংবা নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কম দেখতে পান না ।

শেষের লাইনে কবি আঠারো এদেশের বুকে আসুক নেমে বলতে বুঝিয়েছেন যে, যেহেতু আঠারো বছর অনেক পরিশ্রম এবং অনেক বাধা-বিপত্তি পারি দিয়ে নিজের জীবনকে সফল করার বয়স এই কারণে আমাদের দেশে এই ধরনের আঠারো বছর বয়সের যুবক হাজার হাজার দরকার।

যদি আমাদের দেশে এইরকম যুবক হাজার হাজার তৈরি হতে পারে তাহলে দেশ আর থেমে থাকবে না দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে ধাবিত হতে থাকবে। যার কারণে কবি তার এই কবিতায় আঠারো বছর বয়সের দুঃসহ কাজ এবং বাধা বিপত্তি গুলো ফুটিয়ে তুলেছেন এবং শেষে আঠারো এই দেশে হাজার হাজার জন্ম নেক সেটার ও কামনা করেছেন।

আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব

উপরে আপনারা অবশ্যই আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যাটি পড়ে এসেছেন। তবে এই কবিতা থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাবটি ভালো মত জেনে নিতে হবে।

তাহলে চলুন এখন আমরা এই আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব সুন্দর ভাবে বিশ্লেষন করে বুঝিয়ে আসি।

মূলভাবঃ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মূলত এই কবিতায় আঠারো বছর বয়সকে সুন্দরভাবে কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।  আঠারো বছর বয়স আসলে যে মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং অন্যের প্রতি নির্ভর না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে প্রচেষ্টা সেটাকেও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

এই বয়সে হাজার হাজার প্রতিবন্ধকতা আসে কিন্তু আঠারো বছর বয়সে সেই সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকার যে দিকটা সেটাও তিনি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

এছাড়াও এই বয়স সব সময় গতিশীল থাকে কখনো থেমে থাকে না এবং যেকোন বাধা আসলে সেটা অতিক্রম করার ক্ষমতা থাকে। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে এই বয়সে অনেক ধরনের খারাপ চিন্তা ভাবনা আসতে পারে এবং অনেক বিপর্যয় আসতে পারে সেগুলোকেও এই বয়স কেটে উঠতে পারে খুব সহজে।

বয়সটি অনেক আবেগের এবং কবি এত বাধার মধ্যেও এই বয়সের মানুষদের থেকে এবং যুবকদের থেকে হাজার সফলতার গল্প শুনেছেন। আর এই কারণে কবি এটা কামনা করেছেন যে এদেশের মাটিতে হাজার হাজার আঠারো আসুক নেমে যাতে দেশের উন্নতি দ্রুত সাধন হতে পারে।

আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে এখানে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছরের সমস্ত বিষয় সুন্দরভাবে কবিতার ভাষায় তুলে ধরেছেন।

এই বয়স কিভাবে সমস্ত কিছুকে রুখে দিয়ে colt থাকে। কত বাধা আসে আবার এই বয়সে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে সেগুলো তিনি এখানে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন । আশা করি আপনারা সবাই এই আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব টি সুন্দরভাবে বুঝে গেছেন।

আঠারো বছর বয়স কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

স্যারদের অনেক প্রিয় একটি কবিতা এটি। এই কারণে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দেখা যায় এই কবিতা থেকে অসংখ্য প্রশ্ন এসে থাকে। যার কারণে নিচে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় আসার মত জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হলো।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স কবিতায় আঠারো শব্দটি কতবার এসেছে?

উত্তরঃ এই কবিতায় আঠারো শব্দটি এসেছে মোট সাতবার।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

উত্তরঃ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আঠারো বছর বয়স কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত করা হয়েছে।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স দুঃসহ কেন?

উত্তরঃ কারণ এই বয়স টি একটি পরিবর্তনশীল বয়স। এই সময়ে মানুষ তার কৈশোর থেকে পূর্ন বয়সে পদার্পণ করে। আবার এই বয়স আসলে অনেক ধরনের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিতে হয়। যার কারণে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এখানে আঠারো বছর বয়স কে দুঃসহ বলেছেন।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে কী ভাঙতে চায়?

উত্তরঃ এই আঠারো বছর বয়স সবসময় তাদের পদাঘাতে “পাথর বাধা” ভাঙতে চায়।

প্রশ্নঃ বিপদের মুখে আঠারো বছর বয়স কেমন?

উত্তরঃ বিপদের মুখে এই আঠারো বছর বয়স হচ্ছে অগ্রণী।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স কবিতাটি কত মাত্রার ছন্দে রচিত?

উত্তরঃ এই কবিতাটি মোট ছয় মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে পূর্ণ পর্ব ৬ মাত্রা এবং অপূর্ণ পর্ব রয়েছে দুই মাত্রা ।

প্রশ্নঃ আঠারো বছর বয়স কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ এই আঠারো বছর বয়স কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ এর অন্তর্গত রয়েছে ।

পরিশেষে: আজকের এই পোস্টে আমরা আঠারো বছর বয়স কবিতার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করেছে। এখানে আমরা আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখা বিশ্লেষণ সহ এই আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব সুন্দরভাবে আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

আজকের পোস্ট কেমন লাগলো কিংবা কোন লাইন যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাবেন।

Leave a Comment