আসসালামু আলাইকুম, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য লালসালু উপন্যাস সম্পর্কে জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । কারণ এই লালসালু উপন্যাস থেকে পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।
বিশেষ করে লালসালু উপন্যাসের চরিত্র সমূহ থেকে পরীক্ষায় বেশি বেশি প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। এই কারণে আজকের এই পোষ্টের মধ্যে আমরা পাঠকদের সাথে লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ বিশ্লেষণ করবো।
লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ
এখানে আমরা একদম সহজ ভাষায় প্রতিটি চরিত্রের নাম এবং বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করব যেগুলো পরলে পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক কিংবা সৃজনশীল প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে।
যাই হোক চলুন তাহলে এখন আমরা এক এক করে সুন্দরভাবে লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ নিয়ে আলোচনা করা শুরু করি ।
১. লালসালু উপন্যাসে মজিদের চরিত্র
মজিদ হচ্ছে এই লালসালু উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এই মজিদকে ঘিরেই পুরো লালসালু উপন্যাসটি রচনা করা হয়েছে।
মজিদ ছিল হচ্ছে শিরোনোদেহ। মসজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম হচ্ছে রহিমা এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম হচ্ছে জমিলা।
এই মজিদই মহাব্বত নগর গ্রামে আসে এবং সেখানে মোদাচ্ছের পীরের নামে একটি মাজার প্রতিষ্ঠা করে। মহাব্বত নগর গ্রামে আক্কাস আলী নামের একজন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল । কিন্তু এই মসজিদ তার স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি এবং তাকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছিল।
লালসালু উপন্যাসে মজিদ হচ্ছে কুসংস্কার প্রতারণা এবং সততা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতীকি চরিত্র । আর এই মজিদ ছিল একজন ধর্মব্যবসায়ী, ভন্ড স্বার্থপর এবং শোষক প্রকৃতির একজন মানুষ। সে মিথ্যা কথা বলে মানুষের থেকে অনেক কিছু হাতিয়ে নিয়েছিল।
২. রহিমা
লালসালু উপন্যাসের মধ্যে রহিমা হচ্ছে মহাব্বত নগর গ্রামের একজন মেয়ে। এছাড়াও এই রহিমার সবথেকে বড় পরিচয় হচ্ছে সে ভন্ড মসজিদ মিয়ার প্রথম স্ত্রী।
তবে এই রহিমা ছিল তার স্বামীর অনুগত এবং তার স্বামীর প্রতিটা কথা মেনে চলতাম। এছাড়াও তার স্বামী মজিদ মিয়া যে সমস্ত কর্মকাণ্ড করে সেগুলোতে এই রহিমা গর্বিত হতো এবং খুশি হত।
লালসালু উপন্যাসের লেখক এর মতে এই রহিমা নামের চরিত্রটি ঠান্ডা এবং ভীতু প্রকৃতির একজন মানুষ। এছাড়াও রহিমা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভয় পায় এ ছাড়াও মজিদের প্রতিষ্ঠিত মাজার কেও সেই অনেক ভয় পায়।
রহিমার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে দেখতে লম্বা চওড়া এবং বেশ শারীরিক শক্তি সম্পন্ন একজন মেয়ে। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মজিদ এর চিন্তা ধারার তুলনায় এই রহিমার চিন্তাধারা একদম উল্টো মুখো।
৩. জমিলা
লালসালু উপন্যাসের মধ্যে লেখক এই জমিলাকে মসজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে এই জমিলা হচ্ছে বয়সে অনেক কম অর্থাৎ সে একদম কিশোরী এবং সে গরিব ঘরের একজন মেয়ে।
নামাজ পড়তে ধরে এই জমিলা জায়নামাজে সেজদা করতে গিয়ে অনেকসময় ঘুমিয়ে যেত। মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা যদি থাকে কিছু শাসন করতো তাহলে খুব অল্পতেই জমিলার চোখে জল আসতো।
আরেকটি হাস্যকর বিষয় হচ্ছে জমিলা যখন প্রথম মজিদ কে দেখেছিল তখন সে মজিদকে তার শ্বশুর মনে করেছিল। এমজিতের মুখে একবার এই জমিলা থুতু পর্যন্ত দিয়েছিল।
গ্রামের মধ্যে মজিদ যে সমস্ত কর্মকাণ্ড করত এই সমস্ত মাজার কুসংস্কারে এবং অন্ধবিশ্বাস এর প্রতি জমিলা একদম বিরোধী ছিল। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘুমিয়ে পড়ে যেত।
৪. খালেক ব্যাপারী
লালসালু উপন্যাস এর মধ্যে মজিদ নামের চরিত্রের পরের অবস্থান হচ্ছে এই খালেক ব্যাপারী নামক চরিত্রের। এই খালেক বেপারী হচ্ছে মহববত নগর গ্রামের একজন মতব্বর।
তবে মাতব্বর হলেও তার মধ্যে ছিল শান্তিপ্রিয় এবং ধর্মপ্রাণ এর বিশ্বাস। তিনি খুব ভালো মতো ধর্ম পালন করতেন এবং অনেক নরম মনের মানুষ ও ছিলেন। অর্থাৎ এই খালের ব্যাপারে একজন ভালো মনের মানুষ।
গ্রামের মধ্যে যে সমস্ত অনুষ্ঠান কিংবা আয়োজন হত তার সবকিছুই এই খালেক ব্যাপারীর আদেশে হয়ে যেত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন হলো খালেক ব্যাপারীর ও মোট দুইজন স্ত্রী রয়েছেন।
এই ভন্ড মজিদের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে খালেক বেপারী তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলে। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীর সাথে তার মোট 13 বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল।
খালেক ব্যাপারীর দুইজন স্ত্রির নাম হচ্ছে আমেনা এবং তানু বিবি।
৫. তাহের কাদেরের বাপ
পুরো লালসালু উপন্যাসের মধ্যে এই তাহের কাদেরের বাপের নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ এই তাহের কাদেরের বাপ হলো লালসালু উপন্যাসের মধ্যে একজন নামবিহীন চরিত্র ।
এই লোকটি ছিল প্রচুর বদ মেজাজি এবং জেদি একজন মানুষ তার রাগ মোটেও ভালো ছিল না । তার ছিল মোট চারটি সন্তান এর মধ্যে তিনটি হলো ছেলে এবং আর একটি হলো মেয়ে ।
এই তাহের কাদেরের বাপ নামের চরিত্র টি একসময় বুদ্ধিমান ছিল। কিন্তু সে ভন্ড মজিদের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করত না। অর্থাৎ সে এই মসজিদের আধ্যাত্মিক শক্তিগুলোতে একদম অবিশ্বাসী ছিল।
এই তাহের কাদেরের ভাব সবসময় তার বউয়ের সাথে ঝগড়া করে । ঝগড়া করার পাশাপাশি বউকে নানা খারাপ ভাষা ব্যবহার করে গালাগালি করে ।
এই ঝগড়ার মধ্যে তার বউও তাকে অনেক খারাপ ভাষা এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেয় । এত কুৎসিত ভাষায় তারা নিজেদের মধ্যে গালাগালি করে যেটা বলা সম্ভব নয়।
লালসালু উপন্যাস এর মধ্যে এই তাহের কাদেরের ভাব নিয়ে অনেক মজাদার ঘটনা রয়েছে যেগুলো উপন্যাসটি পড়লে আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
তবে এই তাহের কাদেরের বাপের যে তিনটি ছেলে ছিল সেগুলোর নাম হচ্ছে তাহের, কাদের এবং রতন।
৬. হাসুনির মা
উপরে আমরা যে তাহের কাদেরের বাপের কথা আলোচনা করে আসলাম তার সাথে এই হাসনের মায়ের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ওখানে আমরা বলেছিলাম যে তাহের কাদের এরা মোট তিন ভাই এবং এক বোন।
আর সেই এক বোন হচ্ছে এই হাসুনীর মা। তবে হ্যাঁ এই হাসুনির মায়ের নাম ও আমরা লালসালু উপন্যাসের মধ্যে কোথাও পাইনি। অর্থাৎ এই ইহাসুনীর মা ও লালসালু উপন্যাস এর মধ্যে নামবিহীন একটা চরিত্র।
এই হাসিনুর মা হচ্ছে তাহের কাদেরের একমাত্র বোন। উপন্যাসের মধ্যে এই হাসিনুর মাকে একদম অসহায় দরিদ্র অবস্থায় তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এই চরিত্রকে বিধবা হিসেবেও সেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে অর্থাৎ তার স্বামী মা_রা গেছে।
মেয়েটির যখন স্বামী মারা গিয়েছিল তখন থেকে সে এসে তার বাপের বাড়িতে থাকে। সেখানে সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের ধান ভাঙার কাজ করে।
তার আগের যে স্বামীর বাড়ি রয়েছে সে সেখানে কোন ভাবেই যেতে চায়না। সে সবসময় তার বাবার বাড়িতে থাকতে চাই এবং তার কথা মতো তার স্বামীর বাড়ির সেগুলো কোন মানুষই না ।
অর্থাৎ তার স্বামীর বাড়িতে হয়তো তার ওপর অত্যাচার করা হতো এই কারণে সে আর সেখানে যেতে চায় না। এই হাসুনির মাকে তার ভাই এবং বাবা দ্বিতীয় বিয়ে দিতে পারে নাই এর কারণ হচ্ছে তার নিকা করতে অনেক আপত্তি রয়েছে।
হাঁসুনির মা সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো সে কখনো ঝড় বা বৃষ্টি আসলে অনেক চিল্লাচিল্লি করে অর্থাৎ হইচই করার অভ্যাস হয়েছে ।
৭. আক্কাস আলী
আক্কাস আলী সম্পর্কে লাল উপন্যাস এর মধ্যে খুব বেশি কিছু বর্ণনা করা হয়নি। তবে এই আককাস আলী শহরে অনেক পড়াশোনা করে তারপর গ্রামে এসেছিল।
সে মজিদ মিয়ার ভন্ডামি ধরে ফেলেছিল এবং সেগুলো সে কোনভাবেই বিশ্বাস করে নাই। এই কারণে গ্রামে এসে এই সমস্ত কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে সে মোহাব্বত নগর গ্রামের মধ্যে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
কিন্তু মজিদ নিয়ে ভেবেছিল যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে যাবে এবং সে তার আর এই ভন্ডামো চালাতে পারবে না এবং ধর্ম ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এই কারণে মজিদ মিয়া গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারে কে ডেকে একটি মিটিং করে এবং গ্রামের মানুষদেরকে অনেক উল্টাপাল্টা বোঝায়। যার কারণে গ্রামের মানুষ এই আক্কাস আলীর স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দেয় এবং তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়।
৮. দু””দু মিয়া
এই লোকটি ছিল লালসালু উপন্যাস এর মধ্যে ৭ জন ছেলের বাপ। মজিদ তাকে প্রশ্ন করত এবং সেই প্রশ্ন শুনে তার মুখে ছিল লজ্জার হাসি অর্থাৎ সে লজ্জা পেয়ে হেসেছিল।
এই লোকটি কে লালসালু উপন্যাস এর লেখক গাধার সাথে তুলনা করেছিল কারণ গাধার মতোই তার ঘাড় এবং পিঠ একদম সমান হয়ে গেছে।
তবে লালসালু উপন্যাস এর মধ্যে তার একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে সেটি হচ্ছে “আমি গরিব মুরুক্ষ মানুষ” । এটি বলার কারণ হচ্ছে সেই গ্রামের একজন গরিব মানুষ ছিল এবং তারপর পড়ালেখা খুব বেশি ছিল না অর্থাৎ সে মূর্খ ছিল।
৯. আমেনা
চার নম্বর চরিত্রে আমরা যে খালেক বেপারীর কথা আলোচনা করে এসেছি এই আমেনা হচ্ছে সেই খালেক ব্যাপারির প্রথম স্ত্রী ।
এই আমেনা খালেক বেপারীকে আউয়ালপুরের পীরের পানি পড়া আনতে বলেছিলেন । আর আমেনার সতীন হচ্ছে তানু বিবি যেটা খালেক ব্যপারে আরেকজন স্ত্রী।
গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন হচ্ছে এই আমেনা কে খালেক ব্যাপারী বিবাহ করেছিল মাত্র ১৩ বছর বয়সে। আর আমেনা বিবির বর্তমান বয়স হচ্ছে মোট ৩০।
কিন্তু এই অন্য জায়গার পীরের থেকে পানি পড়া আনার কারণে মজিদ মিয়া খালেক ব্যাপারীকে অনেক উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দিয়েছিল এবং ব্যাপারী এই আমেনা কে তালাক দিয়েছিল।
উপসংহার
আজকের পোস্টে আমরা লালসালু উপন্যাসের চরিত্রসমূহ বিশ্লেষণ করেছি। এখানে আমরা উপন্যাসের মূল যে সমস্ত চরিত্র ছিল সেগুলো নিয়ে আপনাদেরকে ধারণা দিয়েছি ।
এই চরিত্রগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু ছোট ছোট চরিত্র আসে লাল উপন্যাসের মধ্যে যেগুলো লালসালু উপন্যাস পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন ।
তো যদি আরো কোন চরিত্র সম্পর্কে কিছু জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং চাইলে আপনার ক্লাস ফ্রেন্ডদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন ।