খুদে গল্প লেখার নিয়ম এবং সহজ পদ্ধতি বিস্তারিত

আসসালামু আলাইকুম আপনি কি ক্ষুদে গল্প লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? যদি জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।

এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ক্ষুদে গল্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক। এটি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের অত্যন্ত সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক। এই টপিকে অনেক কম লিখে ভালো মার্ক পাওয়া সম্ভব।

যাই হোক ক্ষুদে গল্প লেখার যদি সঠিক নিয়ম অবলম্বন করে পরীক্ষা লিখে আসতে পারেন তাহলে এখান থেকে সম্পূর্ণ মার্ক খুব সহজেই তুলে নেওয়া সম্ভব।

যাইহোক আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে সুন্দরভাবে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খুঁদে গল্প লেখার নিয়ম বুঝিয়ে দেওয়া হবে তাহলে খুব সহজেই পরীক্ষায় লিখতে পারবেন।

ক্ষুদে গল্প কি?

ক্ষুদে গল্প এমন একটি বিষয় যেটা খুব সংক্ষেপে লেখা হয়ে থাকে পাঠকদের জন্য। এখানে খুব ছোট করে লেখক তার মনের ভাব এবং কাল্পনিক জগতের কিছু গল্প বা ঘটনা করে তুলে ধরে।

এই খুঁটি গল্প গুলো বাস্তব ঘটনার ওপর ও নির্মিত হতে পারে কিংবা কাল্পনিক ঘটনার ওপরেও বর্ণনা করা হতে পারে। গল্পটি কাল্পনিক হবে নাকি বাস্তব এটা নির্ভর করে লেখক এর উপর।

লেখক সাধারণত এই গল্পে কোন একটি ঘটনার মূল বিষয়বস্তুগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। হতে পারে সেটি তার নিজের জীবন থেকে কিংবা পারিপার্শ্বিক বিষয়ে লক্ষ্য করেও নির্মাণ করতে পারে।

পড়ূনঃ দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখার নিয়ম

খুদে গল্পের উদ্দেশ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই গল্পটি পাঠকদের কে শুধুমাত্র আনন্দ দেওয়ার জন্য লেখা হতে পারে কিংবা পাঠকদের কে কোন তথ্য দেওয়ার জন্য ও লেখা হতে পারে।

তাছাড়া পাঠকদের কে কোন একটি বিষয় জানানোর জন্য কিংবা কোন একটি বিষয় স্পষ্ট পরিষ্কার করার জন্যও হতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় লেখক এই ক্ষুদে গল্পটি লিখে থাকেন পাঠকদের মনে আনন্দ দেওয়ার জন্য। এছাড়াও বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করার লক্ষ্যেও গল্পটি লেখা হয়।

লেখক গল্পটিকে সহজ ভাষায় লিখতে পারে কিংবা কঠিন ভাষায় ও লিখতে পারে এটি নির্ভর করবে সম্পূর্ণ লেখক এর ব্যক্তিগত মতামতের ওপরে।

ক্ষুদে গল্পগুলো কোন বিষয়বস্তুর ওপর মন্তব্যের ওপরেও হতে পারে। অর্থাৎ লেখক কোন একটি বিষয়ের উপর মন্তব্য করেও একটি ক্ষুদে গল্প রচনা করতে পারেন।

পরীক্ষায় যে সকল ক্ষুধা গল্প আসে এগুলো বিভিন্ন উক্তি এবং শিক্ষামূলক গল্প হয়ে থাকে। যেমন পদ্মা সেতুর উপর একটি ক্ষুদে গল্প লিখতে বলা হতে পারে। লেখক চাইলে এই খুদে গল্পটি সংলাপ আকারেও লিখতে পারেন।

একটি ক্ষুধা গল্প লেখার সময় লেখক সবসময় চেষ্টা করে যে, সেই গল্পটি পড়ে পাঠকগণ সঠিকভাবে গল্পটিকে উপলব্ধি করতে পারছে কিনা। অর্থাৎ লেখক যেটি গল্পের মাধ্যমে ফুটে তুলতে চেয়েছেন কিংবা পাঠকদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন সেই বিষয়বস্তুগুলো পাঠক বুঝতে পেরেছে কিনা।

খুদে গল্প মানে যে গল্পটি একদম ছোট হবে এমনটা নয়। এই গল্পটি ৫ থেকে ১০ বাক্যের মধ্যে হতে পারে কিংবা তার থেকে বেশিও হতে পারে। গল্পটি কত লাইনের হবে এবং গল্পটি কতবর হবে এটি নির্ভর করছে গল্পটি কোন বিষয়ের উপর লেখা হচ্ছে।

যদি দেখা যায় বিষয়বস্তুর মূল ভিত্তিটা ফুটে তুলতে একটু বেশি বাক্যের দরকার হচ্ছে তাহলে লেখক চাইলে এই গল্পটিকে আরও বড় করতে পারেন।

পরীক্ষায় যে সকল ক্ষুদে গল্প আসে এগুলো পরীক্ষার্থী নিজের মতো করে লিখতে পারে। এছাড়া চাইলে পরীক্ষার্থী বই থেকে মুখস্ত করে লিখতে পারে।

কিন্তু পরীক্ষায় মূলত গল্পটি দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা কে বৃদ্ধি করার জন্য এবং পরীক্ষার্থী কেমন গল্প বানাতে পারে বা উপলব্ধি করতে পারে সেটাও যাচাই করার জন্য।

খুদে গল্প লেখার নিয়ম

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সাধারণত এই ক্ষুদে গল্প লেখা এসে থাকে। শিক্ষার্থীরা এই খুদে গল্প গুলো যার যার নিজের ইচ্ছামত লিখতে পারে বানিয়ে বানিয়ে।

তবে এই বিষয়বস্তুগুলো প্রতিটা লেখার আলাদা আলাদা কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। যদি আপনারা সেই নিয়মগুলো ভালোমতো অনুসরণ করে গল্পগুলো লিখতে পারেন এবং পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন তাহলে সেখান থেকে সম্পূর্ণ মার্ক উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব।

নিচে যে সমস্ত খুদে গল্প লেখার নিয়ম আপনাদেরকে বলা হলো এগুলো অনুসরণ করে খুদে গল্প লিখলে ইনশাল্লাহ পরিপূর্ণ মার্ক পাবেন । এছাড়া এই নিয়মগুলো জানা থাকলে একটি ক্ষুধা গল্প বানাতে এবং লিখতেও অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

✓ পরীক্ষায় যে ক্ষুদে গল্পটি লিখতে বলা হয়েছে কিংবা যে ক্ষুদে গল্পটি এসেছে সেই ক্ষুদে গল্পটি আগে নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে কল্পনা করে নিতে হবে। অর্থাৎ ক্ষুদে গল্পটি কেমন হতে পারে এবং এর মধ্যে কোন কোন বিষয়বস্তু উল্লেখ করা যেতে পারে সেগুলো ভালোভাবে ভেবে নিতে হবে। এভাবে ভালোমতো মাথার মধ্যে ভেবে নিলে পরবর্তীতে খুলে গল্প লেখার সময় আর নতুন কিছু ভাবতে হবে না।

✓ বাসায় অবশ্যই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গল্প লেখার চেষ্টা করতে হবে নিজে থেকে বানিয়ে। এই গল্পগুলো লেখার আগে অবশ্যই নিজের চারপাশের পরিপাসিক বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করতে হবে এবং সেগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে।

✓ গল্পগুলো যে বিষয়ের বস্তুর ওপর লেখতে বলা হয়েছে । অবশ্যই সেই বিষয়বস্তু বাস্তবে কেমন এবং বাস্তবে কেমন হতে পারে তার পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। যদি ধারণা না থাকে তাহলে বাস্তবে বিষয়টিকে কল্পনা করে নিজের মাথার মধ্যে ধারণা তৈরি করে নিতে।

✓ একটি গল্প লেখার সময় অবশ্যই এখানে নানান ধরনের চরিত্র তুলে ধরা যাবে না। শুধুমাত্র সেই সকল চরিত্রকে গল্পের মধ্যে উল্লেখ করতে হবে যেটি গল্পের মুখ্য বিষয় বা প্রধান নায়ক। যদি গল্পের মধ্যে নানান ধরনের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা ক্ষুদে গল্পের মানকে নষ্ট করে। একটি বিষয়বস্তু কিংবা একটি গল্প ফুটিয়ে তোলার জন্য যে সকল চরিত্রকে গল্পের মধ্যে তুলে ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শুধুমাত্র সেগুলোকেই তুলে ধরতে হবে।

✓ খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্ষুদ্র গল্প গুলোকে কখনোই জটিল করা যাবে না। সবসময় চেষ্টা করতে হবে সহজ এবং সাবলীল ভাষায় সহজ করে গল্পগুলোকে লেখার। গল্প লেখার সময় এটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে গল্পটি পড়ে যেন পাঠক এই বিষয়বস্তুকে খুব সহজেই নিজের ব্রেনের মধ্যে ক্যাচ করতে পারে। অর্থাৎ সে যেন খুব সহজেই গল্পটি পড়ার সাথে সাথে মূল বিষয়বস্তু বুঝে নিতে পারে।

✓ ক্ষুদে গল্পটি এমনভাবে রচনা করতে হবে যেন কেউ এটি পড়া শুরু করলে আর থামতে না পারে। অর্থাৎ ক্ষুদে গল্পের মধ্যে ছোট ছোট টুইস্ট রাখতে হবে যাতে পুরো গল্পটি একটি পাঠক পরে। এক কথায় গল্পটিকে এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন প্রতিটা সময় পাঠকের নিজের মনের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হতে থাকে। তাহলে কোন পাঠক গল্পটি কে শেষ পর্যন্ত না পড়ে আর যাবে না।

✓ ক্ষুদে গল্পটি যে বিষয়বস্তুর ওপরেই লেখা হোক না কেন অবশ্যই স্পষ্টভাবে সে বিষয়ে সবকিছুই সেখানে তুলে ধরতে হবে। গল্পটির মাধ্যমে যদি আপনি কোন ঘটনা বর্ণনা করতে চান তাহলে অবশ্যই সেই ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে বা ঘটনার পরিবেশ কেমন সবকিছুই সেখানে রাখতে হবে। সাথে ঘটনাটি কোন সময় ঘটেছে সে বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিলে গল্পটি আরো ভালো লাগবে। আর এই বিষয়টি গল্পের মধ্যে ফুটে তোলার জন্য গল্পটির শুরু থেকেই আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে।

✓ একটি গল্পের মধ্যে কিরকম ভাষা ব্যাবহার হবে সেটি নির্ভর করবে সেই গল্পের চরিত্র গুলো কেমন। ক্ষুদে গল্পের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ওপরেও এই গল্পটির ভাষার মাধুর্যতা নির্ভর করতে পারে। তবে সব সময় ক্ষুদে গল্পের মধ্যে অমার্জিত ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। যদি গল্পের মধ্যে কোন অমার্জিত ভাষা চলে আসে তাহলে সেটি পাঠকের মনে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।

পড়ূনঃ পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন (বিদ্যালয়ে এবং এলাকায়)

উপরে যে সমস্ত বিষয় এবং পয়েন্ট আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো এই পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে একটি ক্ষুদে গল্প লেখা আপনার জন্য খুবই সহজ হয়ে যাবে। একটি গল্প লেখার জন্য অবশ্যই নিজের মনের মধ্যে আগে বিভিন্ন ধরনের গল্পের দিক নির্দেশনা কল্পনা করতে হয়।

এখানে মনে রাখতে হবে একদিনেই আপনার মধ্যে এই গল্প লেখার ভাব চলে আসবে না। অবশ্যই নিয়মিত গল্প লেখার অনুশীলন করে যেতে হবে। এভাবে অনুশীলন করতে থাকলে একদিন খুদে গল্প গুলো খুব সহজে নিজে থেকে বানিয়ে লিখতে পারবেন।

আর হ্যাঁ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের ক্ষুদে গল্প আসতে দেখা যায় । আর এগুলো হল , কোন একটি বিষয়বস্তুকে ঘিরে খুদে গল্প , কোন একটি নীতি বাক্যকে ঘিরে সেটির উপর মন্তব্য সূচক ক্ষুদে গল্প এবং বিভিন্ন সংকেতের সূত্র ঘিরে ক্ষুদে গল্প।

ওপরে বুঝিয়ে দেওয়া ক্ষুদে গল্প লেখার নিয়ম অনুসরণ করে গল্প লেখা অনুশীলন করতে থাকলে যেকোনো ধরনের ক্ষুদে গল্প লেখা আপনার জন্য অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

পরিশেষে

আজকে পোষ্টের মধ্যে পাঠকদের কে ক্ষুদে গল্প লেখার নিয়ম একদম সুন্দরভাবে বিস্তারিত আলোচনা করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার চেষ্টা করেছি সহজ ভাষায় পাঠকদের বিষয়বস্তুগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে অবশ্যই খুদে গল্প লেখা অনুশীলন করতে হবে । তাহলে পরীক্ষায় গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে খুদে গল্প লিখে এখান থেকে পরিপূর্ণ নাম্বার তুলে নেওয়া সম্ভব হবে।

পোস্টটি পড়ার পরেও যদি গল্প লেখার নিয়ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন আপনার মনে চলে আসে কিংবা আরো কিছু বিষয় বস্তু সম্পর্কে জেনে নিতে চান তাহলে কমেন্টে আমাদেরকে জানাবেন।

Leave a Comment