৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা ১০ অক্টোবর: শিক্ষা ক্যাডারে ৬৮৩ পদে চাকরির সুবর্ণ সুযোগ

দেশের লাখো চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এক সুখবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। আগামী ১০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি কলেজ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে ৬৮৩ জন শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে।

পরীক্ষার সময়সূচী ও স্থান

৪৯তম বিশেষ বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ১০ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই পরীক্ষার কেন্দ্র শুধুমাত্র ঢাকায় রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

এই বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ বিসিএসের মতো প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয় না। সরাসরি ২০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যারা এই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তাদের পরবর্তীতে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।

প্রার্থী সংখ্যা ও প্রতিযোগিতার মাত্রা

৪৯তম বিশেষ বিসিএস এ অংশ নিতে আবেদন করেছেন মোট তিন লাখ ১২ হাজার চাকরিপ্রার্থী। এই হিসাবে প্রতিটি ক্যাডার পদের বিপরীতে লড়বেন প্রায় ৪৫৬ জন প্রার্থী। তবে এটি যেহেতু শিক্ষা ক্যাডারের বিশেষ বিসিএস, তাই নির্দিষ্ট বিভাগের প্রার্থীরা শুধুমাত্র নিজ নিজ বিভাগের প্রার্থীদের সাথেই প্রতিযোগিতা করবেন।

এই বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, সরকারি চাকরি বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারে চাকরির প্রতি যুবসমাজের আগ্রহ কতটা প্রবল। প্রতিযোগিতার এই তীব্রতা প্রার্থীদের আরও বেশি প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করবে।

আবেদন প্রক্রিয়া ও ফি

গত ২১ জুলাই ৪৯তম বিশেষ বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ২২ জুলাই থেকে অনলাইনে আবেদন শুরু হয়, যা চলে ২২ আগস্ট পর্যন্ত। আবেদনকারীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ফি পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল খুবই সাশ্রয়ী হারে। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ২০০ টাকা এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য মাত্র ৫০ টাকা ফি রাখা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩২ বছর

নিয়োগের ক্ষেত্র ও পদবিন্যাস

৪৯তম বিসিএস এর মাধ্যমে দেশের সরকারি সাধারণ কলেজে বিভিন্ন বিভাগে প্রভাষক পদে ৬৫৩টি শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়াও সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে ৩০টি শূন্যপদে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই দুই মিলিয়ে মোট ৬৮৩টি প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

বিভাগ ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকায় সবচেয়ে বেশি ৬১টি শূন্যপদ বাংলা বিভাগে রয়েছে। এরপর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৫৫টিইংরেজিতে ৫০টিঅর্থনীতিতে ৪০টিদর্শনে ৩০টিরসায়নে ৩০টি, এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ৩২টি পদ রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগেও বিভিন্ন সংখ্যক প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

শিক্ষা ক্যাডারের গুরুত্ব

দেশের সরকারি কলেজ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট বিরাজ করছিল। এই ৪৯তম বিশেষ বিসিএস এর আয়োজন করা হয়েছে মূলত এই শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য। শিক্ষা ক্যাডার দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড স্বরূপ। এই ক্যাডারের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব পালন করা হয়।

সরকারি প্রভাষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এই পেশায় শুধুমাত্র চাকরিগত নিরাপত্তাই নেই, বরং সমাজে একটি সম্মানজনক অবস্থানও রয়েছে। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর মাধ্যমে জাতি গঠনে অবদান রাখার সুযোগ পাওয়া যায়।

পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ

৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা মাত্র কয়েকদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই অল্প সময়ে প্রার্থীদের কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু এটি এমসিকিউ ধরনের পরীক্ষা, তাই প্রার্থীদের বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্নপত্র অনুশীলন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডার সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

পরীক্ষার দিন ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রাখা উচিত। যেহেতু সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী ঢাকায় আসবেন, তাই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং পরিবহন নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

৪৯তম বিশেষ বিসিএস এর মাধ্যমে যারা শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাবেন, তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল। সরকারি প্রভাষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তারা গবেষণা কাজউচ্চতর ডিগ্রি অর্জন এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে অধ্যক্ষ, উপাচার্য বা অন্যান্য শিক্ষা প্রশাসনিক পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি এর এই উদ্যোগ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট দূর হবে এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।

এই ৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা দেশের লাখো তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। ১০ অক্টোবর এর এই পরীক্ষার জন্য সকল প্রার্থীর শুভকামনা রইল। আশা করা যায়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং শিক্ষা ক্যাডারে যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পাবেন।