আসসালামু আলাইকুম, যদি আপনি প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যাগুলো ভালোভাবে জানতে চান এবং প্রতিদান কবিতার মূলভাব বুঝতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রথম পত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতার নাম হচ্ছে প্রতিদান। আর এই প্রতিদান কবিতাটি লিখেছিল আমাদের পল্লী কবি জসীমউদ্দীন। এই কবিতার মধ্যে তিনি বেশ কিছু বিষয় আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
যাই হোক পরীক্ষার জন্য এই কবিতাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে নৈর্ব্যক্তিকসহ বিভিন্ন সৃজনশীল প্রশ্নের প্রতিবছরই এসে থাকে। এই কারণে আমাদেরকে কবিতাটি অবশ্যই ভালো মতো পড়ে যেতে হবে।
প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা
যে কোন কবিতার ব্যাখ্যা বুঝতে হলে অবশ্যই আগে কবিতাটি বই থেকে সুন্দরভাবে পড়ে নিতে হবে। আমরা বই থেকে হুবহু না তুলে দিয়ে, প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যা এখন নিচে তুলে ধরলাম।
ব্যাখ্যা: কবি প্রথম লাইনে দুঃখের সাথে বলেছেন যে আমার ঘরটি যে ব্যক্তি ভেঙ্গে ফেলেছে আমি আবার তাদের ঘর বানিয়ে দেই।
পরের লাইনে বলেছেন যারা তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে বা তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে , কবি তাদেরকেই নিজের আপন করে নেওয়ার জন্য বা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাঁদিয়ে বেড়ায়।
কবিকে যারা পথের বৈরাগী করেছে অর্থাৎ কবিকে ছাড়া এত কষ্ট দিয়েছে । কবি তাদের জন্যই পথে পথে ঘুরে বেড়ায় অর্থাৎ তাদের কাছে যাওয়ার জন্যই কবি এত কষ্ট করে।
কবি জসীমউদ্দীন তাদের জন্যই অনেক গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে অর্থাৎ কবির ঘুম হারাম হয়ে গেছে এই বিষয়গুলোর জন্য এটাই বুঝাতে চেয়েছেন।
পরের লাইনে কবি আবার ও প্রথম লাইন তুলে ধরেছেন । যে যারা কবির থাকার মত ঘরটিকে ভাঙিয়ে দিয়েছে কবি তাদের ঘরই নিজে থেকে বানিয়ে দেয়।
পরের লাইনে কবি বলেছেন যারা এই কবির কুল ভাঙ্গিয়াছে কবি আবার তাদের কুল তৈরি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখানে কুল বলতে বুঝানো হয়েছে কবির থাকার একটি জায়গা বা বাসস্থানকে।
যে ব্যক্তিগুলো কবিকে এত তীব্র যন্ত্রণা এবং কষ্ট দিয়েছে। কবি তাদের জন্যই অর্থাৎ তাদের ভালোর জন্যই কবি এখনো কাঁদে।
পরের লাইনে আবারও বলেছেন যারা না যে ব্যক্তিগণ কবিকে অনেক বেশি কটু কথা শুনিয়েছে এবং অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে। কবি তাদেরকেই আবার বুক ভরা সম্মান করে বা তাদের জন্যই বুক ভরা গান গায়।
যাদের থেকে এই কবি অনেক কষ্ট পেয়েছিল অর্থাৎ কবি কে তারা অনেক বেশি আঘাত করেছে আর এই আঘাতকে কবি কাটার সাথে তুলনা করেছেন। এই কারণেই বলেছেন যে কবি নিজে কত পেয়েছে কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে কাটাটি আঘাত করেছেন কবি সারা জীবন থাকে ফুল দিয়ে এসেছেন।
অর্থাৎ জসিম উদ্দিন কবি কে কেউ যদি কাটা দিয়ে আঘাত করে তিনি তাকে ফুল দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন। আর তার জন্যই কবি সারাটি জীবন কষ্ট করে গেছেন এবং তাদেরকেই সম্মান করে গেছেন।
যদিও কবিকে তারা অনেক বেশি আঘাত করেছে। কিন্তু কবি তাদের ওপর কোন রাগ বা অভিশাপ করেন নাই। সারা জীবন কবিকে তারা শুধুমাত্র পর ভাবে দেখে এসেছে অর্থাৎ তাকে সম্মান জানায় নাই। কিন্তু এই কবি আবার তাদেরকে নিজের বুকে টেনে নেওয়ার জন্য বা তাদেরকে আপন করে নেওয়ার জন্য কেঁদে বেড়ায়।
কবিকে কষ্ট দিয়ে দিতে একদম বুকের মধ্যে অনেক বেশি যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছে। এই কারণে এখানে কবি নিজের বুকে কবর বাধার মত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ কবির বুক ভরা যারা কষ্ট দিয়ে গেছে সারা জীবন, কবি তাদের বুকের বাগানের ফুল ভরে দিয়েছেন।
অর্থাৎ তারা জসীমউদ্দীনকে অনেক কষ্ট দিলেও কবি সেটাকে কিছু মনে করেন নাই। শুধুমাত্র সারাটি জীবন তাদেরকে রঙিন ফুলের মত সোহাগ যত্ন করে গেছেন এবং তাদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা দিয়েছেন।
পড়ূনঃ সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা এবং মূলভাব
পরের চরণে কবি এখানে তাদের মুখের ভাষার কথা বলেছেন । অর্থাৎ তাদের মুখের ভাষা এতটা নিঠুর বা এত নির্দয় ছিল যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ তারা কবিকে বিভিন্ন কটুক্তি কথা শোনাতো এবং কোন সম্মান দিত না।
জসীমউদ্দীন এই প্রতিদান কবিতার মধ্যে শেষের চরণে উল্লেখ করেছেন যে তিনি অনেক জায়গা থেকে অনেক কিছুই এনেছেন । আর তিনি এগুলো এনে সারা জীবন সাজিয়ে গেছেন ।
কিন্তু তারা কখনোই কবিকে আপন করে নেয় নাই। তাদেরকে নিজের বুকে টেনে নেওয়ার জন্য কবি অনেক কিছু করেছেন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন কিন্তু এর পরেও তাদের মন নরম হয় নাই এবং কবিকে তারা কখনো ভালোবাসিনি।
এই দুঃখে ভরা মন নিয়ে কবিতার শেষ লাইনেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, যাদেরকে তিনি আপন করে নেওয়ার জন্য বা বুকে টেনে নেওয়ার জন্য এত কিছু করেছেন এবং এত কেঁদেছেন । তারাই কখনো এই কবির দুঃখ যন্ত্রণা বোঝে নাই এবং কবিকে কখনো আপন করে নেয়নি । অর্থাৎ তারা সব সময় তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং পর করে দিয়েছেন।
উপরে যে কথাগুলো আমরা আপনাদেরকে বলেছি এগুলোই ছিল মূলত প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা। এই ব্যাখ্যাটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়বে তারা প্রতিদান কবিতার প্রতিটি লাইনের মানে বুঝে যাবে।
এখানে পোস্টটি পড়ার সময় অবশ্যই প্রতিদান কবিতাটি সামনে নিতে হবে এবং সেখানে কবিতার মূল লাইন গুলো পড়তে হবে আর আমাদের পোস্টে বলা ব্যাখা গুলো পড়তে হবে । তাহলে এখান থেকে সর্বোচ্চ বোঝা সম্ভব হবে।
প্রতিদান কবিতার মূলভাব
যদিও প্রতিদান কবিতাটি অনেক ছোট একটি কবিতা। আপনারা যদি এর ব্যাখ্যা গুলো ভালো মতো পারেন তাহলেই এর মূলভাবটি সুন্দরভাবে বোঝা যাবেন। আর যদি মূলভাব বুঝতেই চান তাহলে নিচের লেখাগুলো পড়তে থাকুন।
কবি জসীমউদ্দীন এর এই প্রতিদান কবিতার মাধ্যমে তিনি মূলত অসৎ মানুষের প্রতিদান কিভাবে দেওয়া যায় সেটা বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ যারা আপনাদেরকে কষ্ট দিবে আপনি তাদের সাথে কেমন আচরণ করবেন বা তাদের সাথে কি করা উচিত সেটাই মূলত এখানে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
কবিতার মধ্যে কবি শুধুমাত্র এই মানুষদেরকে আপন করে নেওয়ার জন্যই অনেক কিছু করেছেন। অনেক মানুষ আছে যারা আপনাদেরকে কষ্ট দিবে কিন্তু আপনি কখনোই উল্টো তাদের সাথেও সেই কাজ করবেন না। আপনি অবশ্যই তাদেরকে সম্মান করবেন সব সময় এবং শ্রদ্ধা করবেন।
পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে যারা আপনাদেরকে পদে পদে কষ্ট দিয়ে যাবে এবং আঘাত করে যাবে। কিন্তু আপনি যদি তাদেরকে ঘৃণা না করে আপন করে নেন তাহলে তারাও একসময় আপনাকে সম্মান করা শুরু করবে।
ঠিক এই বিষয়টিই কবি জসীমউদ্দীন এই প্রতিদান কবিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বুঝিয়েছেন। সব সময় কবিতায় একটা কথাই বলেছে যারা তাকে পর করে দিয়েছে তাদেরকেই আপন করে নেওয়ার জন্য কবি অনেক চেষ্টা করেছেন।
প্রতিদান কবিতার পাঠ পরিচিতি
প্রতিটি কবিতার পাঠ পরিচিতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখা অবশ্যক। কারণ পরীক্ষায় কবিতার মধ্যে থেকে প্রশ্ন আসার পাশাপাশি পাঠ পরিচিতি থেকেও অনেক প্রশ্ন এসে থাকে। তো নিচে এখন এই প্রতিদান কবিতার পাঠ পরিচিতিটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
পাঠ পরিচিতি: কবি জসীমউদ্দীনের লেখা এই প্রতিদান কবিতাটি মূলত তারই লেখা “বালুচর” কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। কবিতায় কবি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে ক্ষুদ্র স্বার্থকে ত্যাগ করে মানুষকে আপন করে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ এবং এই জীবনের সার্থকতা।
এই সমাজ শুধুমাত্র বিভেদ হিংসা মারামারি কাটাকাটি দিয়ে ভর্তি । এগুলো কারণেই সমাজে এত বেশি অশান্তি সৃষ্টি হয়। কিন্তু কবি এ সকল বিষয়ের প্রতিশোধ না নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য এক নতুন পরিবেশের সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করেছেন।
এর প্রধান কারণ হচ্ছে কবি এটা বিশ্বাস করেন যে মানুষ পরস্পর এক থাকলে এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বেশি হলেই কেবলমাত্র এই দেশ এবং পৃথিবীর উন্নয়ন করা সম্ভব।
যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে সবাই আপন করে এক জায়গায় বসবাস করতে পারি হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে তাহলে আমরা একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবো।
প্রতিদান কবিতার মাধ্যমে কবি সবসময়ই এটা চেয়েছেন যে যারা অনিষ্ঠকারী রয়েছেন এবং খারাপ মানুষ রয়েছে তাদেরকে যেনো আমরা ক্ষমা করে দেই। এমন কি শুধুমাত্র ক্ষমা করে দেওয়াই নয় আমরা সবসময় তাদের মঙ্গল কামনা করব এবং তাদের উপকার করার চেষ্টা করব।
এই কাজগুলো করলেই কেবল সুন্দর, শান্ত এবং বসবাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
প্রতিদান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রতিদান কবিতা থেকে আসার মত অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো মুখস্ত করে রাখা আবশ্যক। নিচে প্রতিদান কবিতা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হলো:
প্রতিদান কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
এই কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচনা করা হয়েছে ।
প্রতিদান কবিতার চরণ সংখ্যা কতটি?
কবিতাটির মোট চরণ সংখ্যা হলো 18 টি ।
প্রতিদান শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পাল্টা দান বা প্রত্যর্পণ।
প্রতিদান কবিতায় কবি কাটা পেয়ে কি দান করেছেন?
উত্তর: ফুল দান করেছেন
প্রতিদান কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
প্রতিদান কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের লেখা বালুচর কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ।
প্রতিদান কবিতায় কে পথের বিবাগী হয়েছেন?
কবিতাটিতে কবি জসীমউদ্দীন নিজেই পথের বিরাগী হয়েছেন।
পরিশেষে
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকক শিক্ষার্থীদেরকে আমরা প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। এছাড়া পোষ্টের মধ্যে প্রতিদান কবিতার মূলভাব ও আলোচনা করা হয়েছে।
তো বন্ধুরা পরীক্ষার জন্য কিন্তু এই কবিতাটি ভালোভাবে বুঝে পড়া এবং কবিতাটি থেকে প্রশ্নগুলো পরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করবো পোস্টটি পড়ার পরে সবকিছু বুঝে গেছেন সুন্দরভাবে।
এরপরও যদি প্রতিদান কবিতা সম্পর্কে অন্য কোন প্রশ্ন মনে আসে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন । সবাইকে ধন্যবাদ এবং চাইলে আপনার ক্লাসমেট দের সাথে আমাদের আজকের এই মূল্যবান প্রতিদান কবিতা সম্পর্কে পোস্টটি শেয়ার করে দিতে পারেন।